সরকারের চরম অনুগত নির্বাচন কমিশন দিয়ে কোনোভাবেই সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘আরেকটি পাতানো নির্বাচনের পথে হাঁটছে নির্বাচন কমিশন। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ার জন্য সবচেয়ে দায়ী নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসন।’
বুধবার বেলা ১১টার দিকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পুরো দায়িত্ব পুলিশ বাহিনীর ওপর অর্পণ করেছে হুদা কমিশন। প্রায় সাড়ে ৬ লাখ নির্বাচনী কর্মকর্তার অধিকাংশই আওয়ামী লীগের দলীয় লোকদের বাছাই করে তালিকা প্রস্তুত করছে পুলিশ। ইতিমধ্যে সারাদেশে ৪১ হাজার প্রিজাইডিং অফিসারের তালিকা পুলিশ প্রস্তুত করে ফেলেছে। এখন দুই লাখ সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও চার লাখ পোলিং অফিসারের তালিকাও প্রস্তুত করার দায়িত্ব পুলিশই পালন করছে। পুলিশের প্রস্তুত করা তালিকা শুধু চূড়ান্ত করার পথে তাঁবেদার নির্বাচন কমিশন। পুলিশ যে তালিকা প্রস্তুত করছে বা করেছে তার যথেষ্ট প্রমাণাদি রয়েছে আমাদের কাছে।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও অনলাইনে পুলিশ কর্তৃক নির্বাচনী কর্মকর্তাদের তালিকা প্রস্তুত করার খবর বড় করে প্রকাশ হলেও নখ-দন্তহীন কমিশন রহস্যজনক নীরবতা পালন করছে। ক্ষেত্র বিশেষে অস্বীকারও করছে। দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, জনগণের ভোটারাধিকার আবার হরণ করার জন্য নতুন চক্রান্তে মেতেছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন।’
বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করে বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে খুলনায় সম্ভাব্য নির্বাচনী কর্মকর্তাদের তালিকা করেছে খুলনার হরিণটানা থানা পুলিশ। তালিকা প্রস্তুত করার আগে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সরকারবিরোধী কেউ থাকলে পুলিশের তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়া হয়েছে। সেই তালিকায় দেখা গেছে, চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৭৪ জন শিক্ষকের নাম। এদের ভেতরে ৬৩ জন বা ৮৫ শতাংশই আওয়ামী লীগ সমর্থক। একইভাবে সারাদেশে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। পুলিশের প্রস্তুত করা তালিকা পরবর্তীতে গণমাধ্যমকে সরবরাহ করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে প্রতিটি নির্বাচনে পুলিশ বেপরোয়া কর্মকাণ্ড করেছে। বিশেষ করে, খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে পুলিশ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের পর রাজশাহী ও বরিশালে জঘন্য নির্বাচন করেছে এই কমিশন। পুলিশ নিজেরাই ব্যালটে সিল মেরেছে। পোলিং এজেন্ট ও সাংবাদিকদেরকে কেন্দ্রেই মারধর করা হয়েছে।
রিজভী বলেন, ‘১৪ নভেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, ভাংচুর ও হেলমেটধারী এজেন্টদের দিয়ে পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ও মিছিলের ওপর পুলিশের গাড়ি তুলে দেয়ার পর ইলিয়ড বা অডিসি’র মতো কাল্পনিক মহাকাব্য রচনা করেছে পুলিশ। হেলমেট পরা হামলাকারীদের এখন বিএনপির নেতাকর্মী বলে চালানো হচ্ছে। হেলমেটধারীদের আমরা দেখেছি নিরাপদ সড়ক দাবির আন্দোলন কর্মসূচিতে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ চালাতে। কিন্তু এখনও সেই হেলমেটধারীদের কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।’
বিএনপির সিনিয়র এ নেতা বলেন, ‘তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত বিরোধী দল দমনে সরকারের যে নিষ্ঠুরতা ছিল, তফসিল ঘোষণার পর সেটি আরও কঠোর আরও নির্মম রূপ লাভ করেছে। বিএনপি ও শরিক জোটকে দমনপীড়নে ব্যতিব্যস্ত রেখে সরকার নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার আয়োজনাদি চালিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পূর্বে যেভাবে প্রশাসন সাজানো হয়েছিল তা সেইভাবেই অক্ষুণ্ন আছে। আওয়ামী লীগের দলবাজ কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে। এখন পর্যন্ত কোনো এসপি, ডিসি, ইউএনও বা ওসিকে বদলি করেনি নির্বাচন কমিশন। বরং তফসিল ঘোষণার পর বদলি বা পদায়নে কমিশনের মতামত লাগবে, অথচ এখনও সরকারের চাহিদা অনুযায়ী প্রশাসন পরিচালিত হচ্ছে। নির্বাচন উপলক্ষে সরকারের সাজানো পুলিশ বাহিনীতে যাতে কোনো ধরনের পরিবর্তন বা বদলি করা না হয়, সেজন্য গত সোমবার দুপুরে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে সরকারের অনুগত একদল পুলিশ কর্মকর্তা বৈঠক করে এসেছেন।